নৌকা-ধানের শীষ নেই চট্টগ্রামের ৩টি আসনে

প্রধান বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নির্বাচনী প্রতীক নৌকা ও ধানের শীষ। মানুষ মূলত এ দুই প্রতীকে ভোট দেন। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের তিনটি আসনে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে কেউ নির্বাচন করছেন না। এ নিয়ে কর্মী-সমর্থকদের মাঝে কিছুটা মনঃকষ্ট থাকলেও নেতারা বলছেন, প্রতীক কোনো সমস্যা নয়, কে কোন জোটের প্রার্থী সেটাই বড় বিষয়।

চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে মহাজোটের প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি মহাজোটের প্রার্থী হলেও নিজ দল জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকে নির্বাচন করছেন। ফলে এ আসনে নৌকা নেই। এর আগের দুইটি নির্বাচনেও তিনি লড়েছেন এ প্রতীকে। ফলে টানা তিনটি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক পাচ্ছেন না আওয়ামী লীগের ভোটাররা। তাদের ভোট দিতে হচ্ছে জোটের অন্য দলের প্রার্থীর প্রতীকে।

এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করছেন কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম। সে দিক দিয়ে বিএনপির ভোটাররা বঞ্চিত হচ্ছেন নিদেজের প্রার্থী থেকে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জহিরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, হাটহাজারীর মানুষ গত তিন সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোট দিতে পারছেন না। এটা দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকদের হতাশ করে। জোটের স্বার্থে এটা হলেও মাঠপর্যায়ে আমাদের জন্য কষ্টের। হাটহাজারী আওয়ামী লীগের স্বার্থে এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেওয়া উচিত ছিল।
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) আসনে নেই ধানের শীষ। এ আসনে ২০-দলীয় জোটের প্রার্থী এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমদ। তাঁর প্রতীক ছাতা। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের দলীয় প্রতীক নেই। তাদের ভোট দিতে হবে ছাতা প্রতীকে। ২০১৪ সালে এ আসনে তাদের প্রার্থীই ছিল না। যদিও অলি আহমদ পুরনো বিএনপি নেতা। ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এ আসনে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের নজরুল ইসলাম চৌধুরী।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রয়েছে জটিল অঙ্ক। সেখানে ২০-দলীয় জোট থেকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয় বিএনপির আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদকে। তিনি দুবার এ আসনে সংসদ সদস্য হন। কিন্তু জোটগত জটিলতার কারণে জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন পান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আজাদ দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে নির্বাচন করে জয় লাভ করে।

একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হামিদুর রহমান আজাদ ও আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ মনোনয়ন নেন। কিন্তু জোটগত জটিলতায় আবারও মনোনয়নবঞ্চিত হন আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। কিন্তু জামায়াতের রাজনৈতিক দল থেকে বাতিল করায় প্রথমে জোটের মনোনয়ন পাননি হামিদুর রহমান আজাদ। পরে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদকে মনোনয়ন না দিয়ে হামিদুর রহমানকে দেয় বিএনপি। স্বতন্ত্র হিসেবে আগেই মনোনয়ন জমা দেয়ায় তিনি আর ধানের শীষ প্রতীক পাননি। পেয়েছেন আপেল। আবার আলমগীর ফরিদ তার মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিয়েছেন। সব মিলে এ আসনে ধানের শীষের প্রতীক নেই কারও কাছে। এ নিয়ে হতাশা, একইসঙ্গে বিভ্রান্তিতে আছে সেখানকার বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা। আর এ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন আশেক উল্লাহ রফিক। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য।

মহেশখালী উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি রিয়াদ মুহাম্মদ আরাফাত আমাদের সময়কে বলেন, বিএনপির কর্মী-সমর্থকরা মনে প্রাণে চান ধানের শীষ। কিন্তু দল যেহেতু জোটগতভাবে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন, নেতাকর্মীরা সমর্থকদের বুঝাচ্ছেন আপেল প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন। প্রতীক নিয়ে একটু সমস্যা থাকলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না।

এ ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিকের চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী আমাদের সময়কে বলেন, নির্বাচনে জোটের সমীকরণ জটিল। এ জটিল সমীকরণের হিসাব মেলাতে গিয়ে প্রতীক ছাড় দেওয়ার বিষয়টি রাজনীতির জন্য হতাশার। কেননা, দলীয় নেতাকর্মীরা পাঁচ বছর বসে থাকেন নিজেদের প্রার্থী আর প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য। এতে করে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হন বলে মনে করেন তিনি।